Election Commission Documents List:  ভারতের নির্বাচন কমিশন (ECI) ভোটার তালিকা নিয়ে বর্তমানে ‘বিশেষ নিবিড় সমীক্ষা’ বা Special Intensive Revision (SIR) চালু করেছে, তা নিয়ে গোটা দেশ জুড়ে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক নানা বিতর্ক সহ সাধারণ মানুষের মধ্যে অনিশ্চয়তা। একদিকে বিরোধীরা বলছে গণতন্ত্রকে হত্যা করা হচ্ছে, অন্যদিকে শাসকদলের দাবি এটি ‘সাফাই অভিযান’ হবে কেবল। পরিস্থিতি ঘোলাটে হলেও, ভোটারদের সামনে কিছু বড় প্রশ্ন উঠে আসতে শুরু করেছে—এসআইআর এ আসলে কী, কী কী নথি জমা দিতে হয়, আর কোন কোন শ্রেণির মানুষ এতে সমস্যায় পড়ছেন? তা বিস্তারিত আলোচনা করতে যাচ্ছি

এসআইআর (SIR) কী?

বিশেষ নিবিড় সমীক্ষা’ বা Special Intensive Revision (SIR) হল ভারতের নির্বাচন কমিশনের একটি পদ্ধতি, যার মাধ্যমে ভোটার তালিকায় নামগুলোর সত্যতা যাচাই করা হবে। ২০০৩ সালের পর প্রথমবার এই এসআইআর চালু হয় পাশের রাজ্য বিহারে, যার উদ্দেশ্য মৃত, ভুয়ো, বা অন্যত্র চলে যাওয়া ব্যক্তিদের নাম তালিকা থেকে বাদ দিতে হবে।

এই সমীক্ষা মূলত তিনটি বিষয় যাচাই করে:

  •  মৃতের নাম রয়েছে গেছে কি না,
  • অন্যত্র স্থানান্তরিত হয়েছেন কি না,
  • একাধিক স্থানে ভোটার হিসাবে নাম আছে কি না।

বিহারে কী চলছে?

২০২৫ সালে বিহারে আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে নির্বাচন কমিশন এসআইআর চালু করেছে। শুরুতেই দেখা যায়, প্রাথমিকভাবে ৫২ লক্ষ মানুষের নাম বাদ পড়েছে এই তালিকা থেকে, যা পরে গিয়ে দাঁড়ায় ৫৬ লক্ষে পৌঁছায়।

এই বাদ পড়াদের মধ্যে:

  • ২১.৫ লক্ষ মানুষ মারা গেছেন বলে রিপোর্ট
  • ৩১ লক্ষ অন্যত্র স্থানান্তরিত হয়েছেন, অন্য রাজ্য বা দেশে
  • প্রায় ১.৫ লক্ষ মানুষের নাম একাধিক বিধানসভা কেন্দ্রে রয়েছে বলে জানানো হয়।

এসআইআর কেন বিতর্কিত?

এদিকে বিরোধীদের অভিযোগ, এত গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রক্রিয়া মাত্র এক মাসের মধ্যে শেষ করা হয়েছে। এতে পরিযায়ী শ্রমিক, দারিদ্রসীমার নিচে বসবাসকারী পরিবার বা প্রান্তিক শ্রেণীর নাগরিকরা পর্যাপ্ত সময় পাচ্ছেন না প্রয়োজনীয় নথিপত্র জমা করার।

তাদের আরও অভিযোগ যে, এই তালিকা সংশোধনের মাধ্যমে নির্দিষ্ট গোষ্ঠীভুক্ত ভোটারদের পরিকল্পিতভাবে বাদ দেওয়া হয়েছে।

ভোটার তালিকায় নাম তুলতে লাগবে যে ১১টি নথি

এদিকে নির্বাচন কমিশন বিশেষভাবে ১১টি নথিকে বৈধ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে, যা এসআইআর চলাকালীন ভোটার তালিকায় নাম তোলার জন্য বাধ্যতামূলক করা হয়েছিল। এই নথিগুলি হল:

  1. কেন্দ্রীয়/রাজ্য সরকারি কর্মচারী অথবা অবসরপ্রাপ্ত কর্মীর পরিচয়পত্র
  2. ১ জুলাই ১৯৮৭-এর আগের সরকারি নথি (ব্যাংক, পোস্ট অফিস, LIC-এর কাগজও গ্রাহ্য)
  3. জন্ম শংসাপত্র
  4. বৈধ পাসপোর্ট
  5. শিক্ষা সংক্রান্ত শংসাপত্র (যেখানে জন্মের সাল ও তারিখ রয়েছে)
  6. সংশ্লিষ্ট এলাকায় স্থায়ী বসবাসকারীর শংসাপত্র
  7. তফসিলি জাতি/উপজাতি/অনগ্রসর শ্রেণির শংসাপত্র
  8. এনআরসি তালিকায় নাম
  9. বনাঞ্চলের অধিকারের শংসাপত্র
  10. পারিবারিক রেজিস্টার (রাজ্য সরকার বা স্থানীয় সংস্থার)
  11. সরকার প্রদত্ত জমি বা বাড়ির নথি (দলিল, পর্চা ইত্যাদি)

ভোটার কার্ড, আধার, রেশন কার্ড কেন চলবে না?

এদিকে এই প্রশ্নটি উঠেছে সুপ্রিম কোর্টেও। ১৭ জুলাই আদালত নির্বাচন কমিশনকে সুপারিশ করে ভোটার আইডি, আধার এবং রেশন কার্ডকেও বৈধ নথি হিসেবে গ্রহণ করতে হবে। কিন্তু কমিশন জানায়:

  • আধার শুধুমাত্র পরিচয়পত্র, নাগরিকত্বের প্রমাণ নয় তবে পরবর্তীতে আধার কার্ডকে পরিচয় পত্র হিসেবে ভোটার কার্ড রক্ষায় ব্যবহার করা যাবে বলে জানানো হয়
  • ভোটার আইডি চূড়ান্ত প্রমাণ নয়, কারণ তালিকা থেকেই তো যাচাই হচ্ছে
  • রেশন কার্ড নাগরিকত্ব বা বয়স যাচাইয়ের প্রমাণ নয়

এর ফলে এসআইআরে এগুলিকে বৈধ নথি হিসেবে মানা হচ্ছে না।

কারা এই নিয়মের বাইরে?

নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, যাঁদের নাম ২০০৩ সালের জানুয়ারি মাসে প্রকাশিত ভোটার তালিকায় ছিল, তাঁদের নতুন করে কোনো নথি জমা দেওয়ার দরকার নেই। অর্থাৎ, সেই তালিকাকে আপাতত ‘নির্ভুল’ ধরা হচ্ছে এবং পরে যাঁরা তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন, তাঁদেরই যাচাই হচ্ছে।

প্রক্রিয়াটি কীভাবে হচ্ছে?

  • বিএলও (BLO)-র মাধ্যমে প্রত্যেক বুথে তথ্য সংগ্রহ করা হবে
  • তথ্য যাচাই বিধানসভা কেন্দ্র ধরে হবে
  • এরপর যাচাই জেলা স্তরে হবে
  • তারপর পাঠানো হচ্ছে রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের দফতরে

পশ্চিমবঙ্গে কী হবে?

জানা যায়  ২০০২ সালে পশ্চিমবঙ্গে শেষ এসআইআর হয়েছিল। তাই ভবিষ্যতে পশ্চিমবঙ্গেও যদি এসআইআর চালু হতে চলেছে যা নির্বাচন কমিশনও জানায়, তাহলে ২০০২ সালের তালিকাকে ‘অক্ষত তালিকা’ হিসেবে ধরা হবে, বিহারের মতোই।

বিতর্কের মূল বিষয় কী কী?

  • এত অল্প সময়ে এত বড় প্রক্রিয়া কেন সম্পন্ন হচ্ছে?
  • পরিযায়ী শ্রমিকরা কিভাবে কাগজপত্র জমা দেবে?
  • এনআরসি বা পারিবারিক রেজিস্টার বিহারে নেই, তাহলে সেগুলো নথি হিসেবে ধরা হচ্ছে কীভাবে ?
  • তফসিলি জাতি/উপজাতি শংসাপত্রে বয়স থাকে না, তাহলে বয়স প্রমাণ করবেন কীভাবে?

বিরোধীদের অভিযোগ

এদিকে আরজেডি নেতা তেজস্বী যাদব বলেন, “এটা দাবার ঘুঁটি দিয়ে ক্রিকেট খেলতে বলছে নির্বাচন কমিশন।” তাঁর বক্তব্য অনুযায়ী, এই এসআইআর প্রক্রিয়াকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত করা হচ্ছে , এক শ্রেণির ভোটারদের তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছে।

নির্বাচন কমিশনের অবস্থান

কমিশনের যুক্তি:

  1. এটি একটি সাংবিধানিক নিয়মভিত্তিক প্রক্রিয়া হবে
  2. অতীতে এমন বহুবার হয়েছে বলে দাবি
  3. সব তথ্য যাচাইয়ের পরেই নাম বাদ দেওয়া হচ্ছে বলে দাবি
  4. কেউ যদি বাদ পড়ে থাকেন, তাঁর জন্য রিভিশন ফর্ম-৬ জমা দেওয়ার সুযোগ আছে

পরিশেষে বলা যায়, ভোটার তালিকা থেকে অবাঞ্ছিত নাম বাদ দেওয়ার প্রয়াস যদি ন্যায্য হয়, তাহলে তার পাশাপাশি নিশ্চিত করা জরুরি—একজন যোগ্য ভারতীয় নাগরিকও যেন শুধু কাগজপত্রের অভাবে তাঁর ভোটাধিকার হারিয়ে না থাকে।

By AE Team

AE Team Working in this field for several years. We have well experience in content writing and seo knowledge for better help for readers. We also deliver genuine and authentic information about any post we published. Please Follow us as soon as possible.